আজ বৃহস্পতিবার, ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিক্ষকদের প্রতি এ কেমন শ্রদ্ধা

সংবাদচর্চা রিপোর্ট
মানুষ গড়ার কারিগর যাদের বলা হয়; সেই শিক্ষকদের ডেকে এনে ‘ত্রাণ’ দিয়ে রীতিমতো অপমান করলো বেসরকারি এনজিও সংস্থা ব্র্যাক। নারায়ণগঞ্জে তাদের এমন কর্মকান্ডে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা শুরু হয়েছে। এমন কাজ জাতির জন্য লজ্জা বলে ফেসবুকে লিখেছেন জেলার সিনিয়র এক সাংবাদিক।

নারায়ণগঞ্জ জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও এটিএন বাংলার জেলা প্রতিনিধি আব্দুস সালাম গত তিন জুন শিক্ষকদের ত্রাণ দেওয়া বিষয়ে ফেসবুকে পরপর দুটি স্ট্যাটাস দেন। প্রথম স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন- ‘নারায়ণগঞ্জের শিক্ষকদের ডেকে নিয়ে ব্রাকের রিলিফ তুলে দিয়ে অপমান করার জন্য কর্তৃপক্ষকে দুঃখ প্রকাশ করা উচিৎ? এটা জাতির জন্য লজ্জা।’ দ্বিতীয় স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন- ‘আশ্চর্য? নারায়ণগঞ্জের শিক্ষকদের বার একাডেমিতে ডেকে নিয়ে সরকারি এাণ দেয়া হলো। অনেক শিক্ষক অপমান বোধ করে চলে এসেছেন।

এ কেমন আচরণ? তাঁর এই স্ট্যাটাসে সামসুল হক নামে একজন কমেন্ট করেন। তাতে তিনি লিখেন- ‘সরকারি ত্রাণ নয়, যতটুকু শুনেছি ব্র্যাকের ত্রাণ জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে দেয়া হয়েছে। এই ধরনের উদ্যোগ শিক্ষক সমাজের জন্য একটা লজ্জাজনক ঘটনা। শিক্ষক সমাজের প্রতি সরকারি কর্মকর্তাদের দৃষ্টিভঙ্গির আসল রূপ এতে ফুটে উঠেছে। শিক্ষকদের পক্ষ থেকে কি ত্রাণের জন্য কোন আবেদন করা হয়েছিল? কিংবা সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষকদের চাল ডালের ব্যাগ হাতে ধরিয়ে দেয়ার নির্দেশনা ছিল? গতকাল জেলা শিক্ষা অফিসের একজন কর্মকর্তা যখন টেলিফোনে আমাকে রিলিফ আনার জন্য শিক্ষকদের পাঠাতে বলেছিলেন; তখনি আমি এর প্রতিবাদ করি এবং শিক্ষক সমিতির একজন নেতাকে এই ধরনের অপমানজনক তৎপরতা বন্ধ করার অনুরোধ করি। তবে তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে যে সকল শিক্ষক রিলিফ গ্রহণের জন্য গিয়েছিল তাদের জন্য সত্যিই করুণা হয়।’ এ বিষয়ে ব্র্যাক নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়কারী হুমায়ুন কবীর মুঠোফোনে বলেন, ‘গত এক জুন থেকে সদর উপজেলার প্রায় সাড়ে তিনশ ননএমপিওভুক্ত শিক্ষককে আমরা মানবিক সহায়তা করে আসছি।

এটাকে ‘ত্রাণ’ বলা ঠিক হবে না। জেলা প্রশাসনের তালিকা এবং তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করেছিমাত্র। এতে শিক্ষকরা অপমানিত হলো কীনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আসলে শিক্ষকদের আমরা ডাকি নাই। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে তারা এসেছেন। তালিকার অনেকেই আসেন নাই। যাদের প্রয়োজন হয়েছে তারা নিয়েছেন।

অবশ্য আমরা ছবি তুলতে চেয়েছিলাম; কিন্তু শিক্ষকদের পক্ষ থেকে অনুমতি না পাওয়ায় ছবি তোলা সম্ভব হয়নি।’ নাম প্রকাশ না করার সূত্রে এক শিক্ষক বলেন, রমজান মাসে সদর উপজেলার শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে আমাদের তালিকা করা হয়। কী দেওয়া হবে এমন কিছুই তখন জানানো হয়নি। বরং বলা হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ তালিকা করা হচ্ছে। ধরে নিয়েছিলাম, করোনাকালের এ দুর্যোগ মুহূর্তে হয়তো আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হবে। তা না করে শুধু খাদ্য সামগ্রী দেওয়া হলো। চাইলেই ওনারা এসব খাদ্য সামগ্রী শিক্ষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে দিতে পারতো। ফোন করে ডেকে নিয়ে অপেক্ষা করিয়ে শিক্ষকদের হাতে খাদ্য সামগ্রীর থলে ধরিয়ে দেওয়াটা শোভন হয়নি। এতে শিক্ষকসমাজের অপমানবোধ হওয়াটাই স্বাভাবিক। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আরও ভেবেচিন্তে কাজ করা উচিত ছিল।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ